আল্লাহ্ তা’লার অস্তিত্ব ( Existence of God / Allah) – Translation of Speech by Professor Saleh Alladin
প্রফেসর সালেহ্ মুহাম্মদ আলাদীন
যুক্তরাজ্যের ২০০৯ সালের বার্ষিক জলসায় প্রদত্ত বক্তৃতা
أشهد أن لا إله إلا الله وحده لا شريك لـه، وأشهد أن محمدًا عبده ورسوله. أما بعد فأعوذ بالله من الشيطان الرجيم*
بسْم الله الرَّحْمَن الرَّحيم * الْحَمْدُ لله رَبِّ الْعَالَمينَ * الرَّحْمَن الرَّحيم * مَالك يَوْم الدِّين * إيَّاكَ نَعْبُدُ وَإيَّاكَ نَسْتَعينُ * اهْدنَا الصِّرَاطَ الْمُسْتَقيمَ * صِرَاط الَّذِينَ أَنْعَمْتَ عَلَيْهِمْ غَيْر الْمَغْضُوب عَلَيْهمْ وَلا الضَّالِّينَ
(آمين)
অধমের বক্তব্যের বিষয় হচ্ছে আল্লাহ্ তা’লার অস্তিত্ব। বাহ্যিক চোখ দিয়ে আল্লাহ্ তা’লার সত্ত্বা দেখা যায় না ঠিকই তবে শক্তিশালী দলিল-প্রমাণ দ্বারা তাঁর অস্তিত্ব প্রমাণিত। চন্দ্র-সূর্য এবং তারকারাজি নিরবধি আমাদের সেবায় নিয়োজিত। আকাশ থেকে পানি বর্ষিত হয় ফলে বিভিন্ন প্রকার রিয্ক আমরা লাভ করি। আকাশ এবং পৃথিবীর প্রতিটি কণা স্বীয় অপূর্ব বা বিস্ময়কর বৈশিষ্ট্য দ্বারা তাঁর অস্তিত্বের সাক্ষ্য প্রদান করে। পৃথিবীতে বিচরণকারী প্রতিটি জীব-জন্তু স্বীয় সৃষ্টিশৈলী দ্বারা খোদার প্রতি ইঙ্গিত করে। প্রত্যেক মানুষ যে উৎকন্ঠার সময় তাঁকে ডাকে, তা সে যে ধর্মের সাথেই সম্পর্ক রাখুক না কেন আল্লাহ্ তা’লা তার প্রার্থনা শ্রবণ করেন আর তার কষ্ট দূরীভূত করে আপন অস্তিত্বের প্রমাণ দেন। পূত-পবিত্র বান্দাদের সাথে তিনি কথাও বলেন আর বাক্যালাপ দ্বারা আপন সত্ত্বা সম্পর্কে তাদেরকে অবহিত করেন। তিনি নবীদেরকে অদৃশ্যের বিশেষ জ্ঞান প্রদান করেন। তাদের মাধ্যমে সেসব বিস্ময়কর অলৌকিক নিদর্শন প্রকাশ করেন এবং চরম বিরোধিতা সত্বেও তাদের সফলতা দান করে জানিয়ে দেন যে, আমি আছি।
বিজ্ঞানের মাধ্যমে আমরা অনেক বিষয় সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করি আর এই ফলাফলে উপনীত হই যে, অবশ্যই এই বিশ্বের একজন খোদা থাকা প্রয়োজন। যেভাবে আল্লাহ্ তা’লা পবিত্র কুরআনে বলেন, اَفِىْ اللّٰهِ شَكٌّ فَاطِرِ السَّمٰوٰتِ وَالْاَرْضِؕ (সূরা আল্ ইব্রাহীম: ১১) যারা ধর্মে বিশ্বাস করেন – জ্ঞান অর্জনের জন্য তাদের কাছে বড় একটি মাধ্যম হচ্ছে আল্লাহ্ তা’লার কালাম বা ঐশী গ্রন্থ। যেভাবে জামাতে আহমদীয়ার পবিত্র প্রতিষ্ঠাতা হযরত মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী, প্রতিশ্রুত মসীহ্ ও মাহদী (আ.) তাঁর একটি বিখ্যাত কবিতায় বলেন:
‘সকল প্রশংসা আদি অন্তের প্রভুর!
যাঁর কৃতজ্ঞতা প্রকাশের ভাষা আমাদের নেই।
যাঁকে আমরা চিনেছি তাঁর কালামের মাধ্যমে।
আদিকাল থেকেই আল্লাহ্ তা’লা প্রত্যেক জাতিতে স্বীয় নবী প্রেরণ করে এসেছেন আর তাদেরকে নিজ বাণী দ্বারা সম্মানিত করেছেন। আমাদের নেতা ও মনিব খাতামান্নবীঈন হযরত মুহাম্মদ মুস্তফা (সা.)-এর উপর পবিত্র কুরআন আকারে স্বীয় মহান গ্রন্থ অবতীর্ণ করেছেন, যা তাঁর অস্তিত্বের একটি অতুলণীয় দলীল বা প্রমাণ। আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মদীন ওয়া আলা আলে মুহাম্মদীন ওয়া বারিক ওয়া সাল্লিম ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ।
আমাদের সাবেক ইমাম হযরত মির্যা তাহের আহমদ সাহেব, খলীফাতুল মসীহ্ রাবে (রাহে.) আল্লাহ্ তা’লার অপার কৃপায় ১৯৯৮ সনে ‘Revelation, Rationality, Knowledge and Truth’ নামে একটি যুগান্তকারী গ্রন্থ রচনা করেন, আলহামদুলিল্লাহ্। ‘ইলহাম-আকল-ইলম আওর সাচ্চায়ী’ নামে এর ঊর্দূ অনুবাদও (বাংলা নাম: ঐশী জ্ঞান, ইলহাম এবং সত্য – অনুবাদক) ছাপা হয়েছে। এছাড়া আরবী এবং ভারতের মালায়লম ভাষায়ও এর অনুবাদ প্রকাশিত হয়েছে, আলহামদুলিল্লাহ্। এই মহান গ্রন্থে বিজ্ঞান সম্পর্কিত পবিত্র কুরআনের বিভিন্ন আয়াত এবং আগামীর সাথে সম্পর্কযুক্ত পবিত্র কুরআনের বিভিন্ন ভবিষ্যদ্বাণীর উল্লেখ করেছেন যদ্বারা আল্লাহ্ তা’লার অস্তিত্বের বিস্ময়কর প্রমাণ পাওয়া যায়। অধম এই বক্তৃতা প্রস্তুত করার সময় সেই গ্রন্থের সহায়তা নিয়েছি। আল্লাহ্ তা’লা আমাদের প্রিয় ইমাম হযরত খলীফাতুল মসীহ্ রাবে (রাহে.)-এর পদমর্যাদা জান্নাতে উন্নীত করুন, আমীন।
আল্লাহ্ তা’লা তাঁর নবীদেরকে অদৃশ্যের বিভিন্ন সংবাদ প্রদান করেন যা তাদের জীবদ্দশায় পূর্ণ হয়ে খোদার অস্তিত্বের শক্তিশালী দলীল প্রদান করে। হযরত খলীফাতুল মসীহ্ রাবে (রাহে.) স্বীয় গ্রন্থে লিখেন: ‘খোদার জ্ঞান স্থান-কাল এবং সীমানার ঊর্ধ্বে কিন্তু মানুষের নয়। যদিও সেসব জ্ঞান যা মানুষের শক্তি ও নৈপুণ্য বহির্ভূত তা খোদার ইচ্ছায় ওহীর মাধ্যমে লাভ করা যেতে পারে। যেভাবে পবিত্র কুরআন বলে: اِلَّا مَنِ ارْتَضٰى مِنْ رَّسُوْلٍ فَلَا يُظْهِرُ عَلٰى غَيْبِهٖۤ اَحَدًاۙ (সূরা আল্ জিন্ন: ২৭-২৮) অর্থ: বস্তুত: তিনি তাঁর মনোনীত নবী ছাড়া অন্য কারো কাছে অদৃশ্যের সংবাদ প্রকাশ করেন না।
এটি জেনে রাখা আবশ্যক যে, উপরোক্ত আয়াত, নবী নন এমন কেউ সত্য স্বপ্ন, কাশ্ফ অথবা ইলহামের মাধ্যমে অদৃশ্যের জ্ঞান অর্জন করার সম্ভাবনাকে উড়িয়ে দেয় না। তবে এটি অবশ্যই বলেছে যে, নবীদের ছাড়া অন্য কেউ আল্লাহ্ তা’লার অদৃশ্যের জ্ঞান সম্পর্কে কোন ক্ষেত্রেই বুৎপত্তি অর্জন করতে পারে না।
এখানে যে নীতির উপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে তা হলো, নবীদের ছাড়া অন্য যাদেরকে এই জ্ঞান দান করা হয় তা ইলহামের আলোকেই হোক না কেন – তা প্রাঞ্জলতা, নির্ভূলতা এবং পূর্ণতার মাপকাঠিতে কোনভাবেই সেই জ্ঞানের মোকাবিলা করতে পারে না যা নবীদেরকে প্রদান করা হয়। এই ইলমে লুদুন্নি (খোদা প্রদত্ত জ্ঞান-অনুবাদক) যা মূলত: নবীদের দেয়া হয় তা সাধারণত আধ্যাত্মিক জগত এবং পরকালের সাথে সম্পর্কযুক্ত হয়ে থাকে। ঐশী বাণী পার্থিব জ্ঞানের প্রত্যেক বস্তুর অগণিত শ্রেণীকে পরিবেষ্টন করে রাখে কিন্তু এর মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে এর মাধ্যমে সর্বজ্ঞ খোদার অস্তিত্ব এবং নবীদের সত্যতা সম্পর্কে মু’মিনদের ঈমান দৃঢ়তা লাভ করা।’ (Revelation, Rationality, Knowledge and Truth – P.238)
পবিত্র কুরআন এবং মহানবী (সা.)-এর ভবিষ্যদ্বাণীসমূহ্ এই উপক্রমণিকার পর আমি মহানবী (সা.)-এর একটি মহান ভবিষ্যদ্বাণীর উল্লেখ করছি যা হযরত মসীহ্ মওউদ (আ.)-এর যুগের সাথে সম্পর্কযুক্ত। যা পূর্ণ হয়ে আল্লাহ্ তা’লার মহান অস্তিত্বের প্রমাণ উপস্থাপন করছে। মহানবী (সা.) ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন:
‘লা ইউতরাকুন্নাল কিলাসু ফালা ইউসআ আলাইহা’ (মুসলিম-বাব নুযূলুল ঈসা) অর্থাৎ, উষ্ট্রী পরিত্যক্ত হবে আর এতে চড়ে দ্রুত ভ্রমন করা হবে না।
এই ভবিষ্যদ্বাণী এত স্পষ্ভাবে পূর্ণ হয়েছে যে, এতে কোন প্রকার সন্দেহের অবকাশ নেই। আরবে ভ্রমনের জন্য উট একান্ত প্রয়োজনীয় ছিল – একে মরুর জাহাজ বলা হতো, কিন্তু এখন রেলগাড়ী, মোটর গাড়ী, উড়োজাহাজ, বাষ্পীয় জাহাজ আবিস্কৃত হয়েছে ফলে এখন উটের পরিবর্তে আরব দেশে মোটর গাড়ীতে সফর করা হয়। আহমদীয়া মুসলিম জামাতের পবিত্র প্রতিষ্ঠাতা হযরত মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী, মসীহ্ মওউদ ও মাহদীয়ে মা’হুদ (আ.) বলেন: ‘আরবের অতীত ইতিহাস সম্পর্কে যে ব্যক্তি কিছুটা অবহিত তিনি খুব ভালো ভাবেই জানেন, উট আরবের পুরনো বন্ধু আর আরবী ভাষায় প্রায় হাজারের কাছাকাছি উটের নাম রয়েছে। উটের সাথে আরব বাসীর এত পুরনো সম্পর্ক দেখতে পাওয়া যায় যে, আমার জানা মতে আরবী ভাষায় প্রায় বিশ হাজারের মত কবিতা আছে যাতে উটের উল্লেখ রয়েছে আর আল্লাহ্ তা’লা ভালভাবেই জানেন যে, আরববাসীর হৃদয়ে প্রভাব সৃষ্টি করার জন্য আর ভবিষ্যদ্বাণীর গুরুত্ব তাদেরকে অনুধাবন করানোর লক্ষ্যে উটের এ ধরনের মহান বিপ্লবের উল্লেখ করার চেয়ে উত্তম আর কোন উপায় নেই।’ (তোহফা গোলড়ভীয়া, রূহানী খাযায়েন, ৭ম খন্ড, পৃ: ১৯৬-১৯৭)
Leave A Comment
You must be logged in to post a comment.